ছোট গল্প

ছোট গল্প

ঈদ, যেখানে যখন যেমন--

লুবনা ইয়াসমিন

আমাদের বাড়িতে ছোটবেলা থেকেই  ঈদের আগের রাত মানেই মেহেদি পরা হচ্ছে, নিজে পরছি, ছোট বোনকে পরাচ্ছি, যারা বাড়ির কাজে সাহায্য করে তাদের পরাচ্ছি। বিয়ের পরে শশুর বাড়িতে এসেও একই অবস্থা, শুধু হাতের সংখ্যা বেড়ে গেলো অনেক, ভাতিজি, ভাগনি, আর সব হেল্পিং হ্যান্ডস মিলিয়ে আমার নিজের জন্যে সময় বের করতে মধ্যরাত গড়িয়ে যায় কখন টেরই পাইনা। বিয়ের আগেও যেমন, বিয়ের পরেও, আমার সিঙ্গার সেলাই মেশিন ঘটাং ঘটাং করে চলছে এমন কী ঈদের সকালেও, আমাদের বাড়ির এটাও ঈদের আমার ট্র্যাডিশন। আমি দর্জি বাড়ি থেকে আনা কাপড়ই হোক, আর বুটিকের কাপড়ই হোক, বা নিজের বানানো পোশাকই হোক না কেন, পার্ফেক্ট ফিট করতে ব্যস্ত, সাথে বাড়ির ছেলেদের পাঞ্জাবিও বাদ যাচ্ছেনা আমার অল্টার শিল্প থেকে। শ্বশুর বাড়িতে আরো এক কাঠি বেশি, 'চাচিমা, আমার কাপড়টা' কিংবা 'মামি আমার ডেরেসটা খুব ঢোলা, এট্টু চাপাইয়া দিবেন' এইসব চলতেই থাকে! সেই সাথে রান্নার আয়োজনে শামিল হওয়া বাড়তি দায়িত্ব। 

দেশ ছেড়ে ক্যানাডায় চলে আসবার পর ঈদ একটু অন্যরকম। অধিকাংশ সময়ে শর কর্মব্যস্ত থাকে, যদি না কোন সাপ্তাহিক বা সরকারী ছুটির দিনে ঈদ পড়ে যায়। কিন্তু আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই ঈদের গায়ে দেশী রঙ লাগানোর। ছুটি না থাকলে ছুটি নিয়ে নেই আগাম। ঈদের আগের রাতে কখনো কখনো রীতিমত মেহেদি পরা উৎসবের মত করে পালন করা হয়। শহরের বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা, ড্যানফোর্থ, যাকে আমরা বাংলা পাড়া ডাকি, সেখানে তো রীতিমত আয়োজন করা হয় মেহেদি পরা বা আরো আরো ঈদ পূর্ববর্তী উৎসব আবহের। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু নিরিবিলি নিবিড় আয়োজনই পছন্দ করি। কুরবানি দিতে চাইলে অতি উৎসাহীরা ফার্মে গিয়ে কুরবানি দেন, না হলে হালাল মাংসের দোকানগুলোতে আগাম নামধাম আর পয়সা দিয়ে অর্ডার করা যায়। সেক্ষেত্রে কুরবানির মাংস পেতে পেতে ঈদের পরদিনও হয়ে যেতে পারে। সকালে বাড়ির সবাই মিলে নতুন পোশাকে ঈদের জামাতে যাওয়া, খাবার টেবিলে দেশী খাবারের সমারোহ, নিজ বাড়িতে বন্ধু পরিজনদের আপ্যায়ন করা, বন্ধু পরিজনদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ভেতর দিয়ে ঈদ আয়োজন যার যার কমিউনিটির ভেতরে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। আমি এদেশে এসেও ঈদে আমার সেলাই মেশিনের ট্র্যাডিশন বজায় রেখেছি। ২০ ডলার, ১০ ডলারের নতুন নোট ব্যাংক থেকে তুলে আনি, ঈদের সালামী দেয়ার জন্যে, যদিও ছেলেদের দিয়ে সালাম করাই না, তাতে কি, সালামীতে তো দোষ নেই। এবারের ঈদ অন্যরকম তো বটেই। এ বছর ঈদ উল ফিতরে আমরা ঈদের জামাতে যাইনি, কেউ কারো বাড়ি যাইনি। এবারে শারীরিক দূরত্বের নিয়ম মেনে চাইলে ঈদের জামাতে যাওয়া যাবে, তবে এপয়েন্টমেন্ট এর ভিত্তিতে, কারণ খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এক একটা জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া অনলাইন স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে ঈদের জামাতে অংশ নেয়া যাবে। ছবির ঈদ জামাতটি করোনামুক্ত স্বাভাবিক সময়ের। আশায় প্রাণ বাঁধি পৃথিবী আবার আগের মতন হয়ে উঠবে। আবারো ঈদ আসবে প্রাণখোলা উৎসব আবহে। সবাইকে ঈদ মুবারাক।