তাহমিনা চৌধুরীর কবিতালোচনা

তাহমিনা চৌধুরীর কবিতালোচনা

মোহাম্মদ আলী

তাহমিনা চৌধুরী। তিনি একজন সংগঠক। শ্যামল সিলেট সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও এডমিন। তাছাড়া "ছোট ছোট কবিতা ঘর" এই আসরের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। তিনি আমাদের মৌলভীবাজার জেলার ভাটেরা ইউনিয়নের জন্মগ্রহণ করেন এবং বৈবাহিক সূত্র কবি আব্দুছ ছালাম চৌধুরীর সহধর্মিণী। বর্তমানে তিনি স্থায়ীভাবে লন্ডনে বসবাস করছেন। 

তিনি নিয়মিত কবিতা লিখেন। সম্প্রতি তার একটি কবিতা আমার চোখে পড়লো;

---------- ঐতিহ্যের সম্প্রীতি---------

আমি আমার সাধ্যমত সেই কবিতার বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেছি। আশাবাদী গঠনমূলক মন্তব্যে প্রাণিত করবেন। 

----কবি লিখেছেন ---

"বিদুষী এক স্বপ্নচারিনীর পদার্পনে

সৈকতে নামে ঢল,

আচমকা অনুভূতি শিউরে উঠে 

দর্শনে যাবো চল্। 

-----০-----

—প্রথমেই কবি লিখেছেন একজন বিদুষীর কথা, বিদুষী বলতে "শিক্ষিত -জ্ঞানী- সুন্দরী রমণী " এখানে তিনি সুন্দরকে বেছে নিয়েছেন প্রাকৃতিক অর্থে---নীলিমা নীলকে বলেছেন সুন্দরী ; বিদুষী ;

এখানে হয়তো ধরা যেতে পারে, তিনি প্রথমবারের মতো সমুদ্র সৈকত স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে দেখেছেন। তাই সমুদ্র'কে বলছেন বিদুষী"--সুন্দরী। পরক্ষনেই সৈকতে ঢল নামার কথা বলছেন অর্থাৎ সমুদ্র সৈকতে সাধারণত মানুষ যে ভিড় করে সমুদ্রকে আলিঙ্গন করিবার জন্য। সেই আলিঙ্গনের কথা বলেছেন। তার অর্থ হচ্ছে (সৈকত) সমুদ্রের তীর বালুকাময় এবং আছে আচমকা অনুভূতির কথা, শিহরণের কথা" আছে দর্শন শব্দটি। সেই জন্য আমি রমণী নীল গগনকে বেছে নিলাম। 

সাধারণত বলতে গেলে এই সৈকতে একজন সুন্দরী রমণী এসেছেন -তা দেখতে মানুষ সৈকতে সমবেত হয়েছেন এবং একনজর দেখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে মনে হলেও, কবি এখানে সুন্দরী রমণী স্বপনচারিনী সরাসরি নারীকে বলেছেন বলে মনে হয়নি। 

সুন্দরী রমণী (নারী) স্বপনচারিনী হয়, একই সাথে সমুদ্রের নীল আকাশ ও স্বপ্নচারিণী হয়, বলা যায় সমুদ্রের প্রেমে মগ্ন হয়ে দেখতে যাবে চল্।

-----০-----তারপর;

মুক্ত হাওয়ার ক্লান্তিতে যেনো 

দিশে হারিয়ে যায়, 

অভিলাষী মন কিসের টানে

পথ খুঁজে না পায়। 

এখানে এসে কবি মুক্ত হাওয়ার কথা লিখেছেন এবং পরপরই দিশে হারার কথা লিখেছেন। তারপর অভিলাষী মনে টানের কথা লিখেছেন।

সুন্দর যে কোনো কিছুর প্রতি মানুষের টান থাকে। 

আচমকা যে কোন কিছুই যদি সুন্দর হয় মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠে। 

যেমন

সমুদ্রের তীর, বেলাভূমি, ঢালযুক্ত তটভূমি; ইত্যাদি ইত্যাদি। 

সুন্দরী রমণীর প্রতি স্বভাবতই মানুষের উচ্ছ্বাস থাকে, হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় এবং অজানা টান অনুভব করে। দেখতে ভাল এমন, সুদৃশ্য; মনোহর, রূপবান্‌; প্রশংসনীয় সবই মনকাড়া থাকে। কিন্তু আবারও বলবো যেমন প্রকৃতির টান; ঐ আবছা আলো, কবির হৃদয়ে গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছে; এখানে এসে কবি ভাবনা বিভোর হয়ে গেছেন। মুক্ত হওয়া, অভিলাষী ভাবনা ক্রান্তি ঝরাবার ক্ষণ তার মধ্যে অন্যতম।

------০------

অতঃপর

শামুক ঝিনুকের ছড়াছড়ি, আহা!

মরমিয়া এই তীরে,

ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ছে দেখি

সমুদ্রের পাশ ঘিরে। 

— স্বভাবতই 

শম্বুক,(শামুক) ঝিনুকের মতো আবরণযুক্ত জলচর জীব।

শামুকের প্রতি মানুষের আকর্ষন ক্ষীণ, ঝিনুকের তুলনায়। আর ঝিনুকের প্রেমে মত্ত প্রথম হয়ে উঠে প্রথম দর্শনেই। সেই ঝিনুক দিয়ে মালা গাঁথা সহ নানান সৌন্দর্য প্রকাশে ব্যবহার করে থাকেন।

ঝিনুকের নানাবিধ উপকারিতা আছে কবি প্রকৃতির কথা বলছেন, সৌন্দর্যময় ঝিনুকের প্রেমে মত্ত হয়ে বলছেন --

যে ঝিনুকের ছড়াছড়ি। 

আরে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কলতান সে তো অস্বাভাবিক কিছু নয় ;

-------০--------

ঝিকিমিকি বালুর কমল পরশ

কখনো'বা লাগে পায়,

ঢেউয়ে ঢেউয়ে চলে নাবিকের খেলা

হৃদয় উতোলায়। 

এখানে সবচেয়ে ভালো লাগছে ঝিকিমিকি বালুর কোমল পরশ। আসলে সত্যি বালু আর জলের পরশ মনমুগ্ধকর। ঠিক তখন যদি কারো পায়ে নুপুর থাকে, বালু আর জলের খেলায় আশেপাশে কোথাও না কোথায় বাসন্তী রঙের ফুল ফুটে উঠে। 

আর ঐ দূরে দেখা যায় ছোট বড় ডিঙি নৌকা থেকে ছোট ছোট জাহাজের ঢেউয়ে ঢেউয়ে দোল দুলানী। নাবিকের সাথে জনম জনম ধরে ঢেউয়ের খেলা। এখানে এসে ঢেউয়ের তালে প্রকৃতির সাথে দুর্দান্ত কথাগুলো তুলে ধরেছেন। 

-----০------

দুর দিগন্তে শন শন বায়ুর হাক্

সারা সৈকত জুড়ে, 

রোদে মেঘে উম্মুক্ত আলিঙ্গন 

মনময়ূরী উড়ে। 

—আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি দূর দিগন্তের শনশন বায়ু; আর তা যখন ধীরে ধীরে এসে সৈকতের গায়ের সাথে কবির গায়ে লাগে, তখন শিহরণ তো জাগবেই।,আর যদি সেই ক্ষনে বৃষ্টি হয় আর যদি সূর্য উঁকি দেয় ঠিক তখন মেঘের খেলা ; সে কি ভুলানো যায়।

বাহ

যখন রুপার মত ঝলমলে উঠে সমুদ্রের বালুকণা। ঠিকই রোদে মেঘে এমনই উন্মুক্ত আলিঙ্গনে মুখরিত করে মনের আঙিনা। তখন মন ময়ূরী ঠিকই উড়ে যায়। প্রকৃতির সাথে খেলতে খুব ইচ্ছে করে। হাত বাড়িয়ে ছুঁইতে পারলেই যেনো স্বার্থক।

-------০-------

সূর্য ডুবার বিশাল অন্তিম আভা

দিনের হলো ইতি,

মানুষ আর সৈকতের মিলন মেলায় 

"ঐতিহ্যের সম্প্রীতি"।

এখানে এসে কবি আবার সেই প্রথম দিকে ফিরে গেছেন, যেন কবিতাটার মেলবন্ধন সৃষ্টি করবেন। 

এটি সাধারণত প্রশংসনীয় কাজ কারণ কবিতা যখন শুরু হবে তার শেষটা যাতে সাংঘর্ষিক না হয়। এই দিক দিয়ে কবি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন বলতেই হবে। 

শাব্দিক অর্থে কবি তাহমিনা চৌধুরী একজন প্রকৃতি প্রেমী কবি। প্রকৃতির সাথে মেলবন্ধন রেখে তার প্রতিটি লেখাতেই অনন্য এক অনুভূতির প্রকাশ পায়। 

এই কবিতা ফেইসবুকে প্রকাশের পর কবিতার মন্তব্য কলামে অনেকেই রোমান্টিক রোমাঞ্চকর সহ অসাধারণ চমৎকার শব্দে কবিকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সার্বিক অর্থে আমি মনে করি উৎসাহিত করেছেন। 

আমার বিশ্লেষণ কতটুকু সঠিক হয়েছে জানি না। আমার পক্ষ থেকে কবির জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।