শূন্য

শূন্য

তপনকান্তি মুখার্জি 

       লালগুঁড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে যে কয়লার খাদান তা এখন পরিত্যক্ত , তবু সেখানে এখনও মানুষের মেলা । বিপজ্জনক জেনেও অনেকেই সেখানে ছোটে , খাদানের ভেতরে ঢোকে কালোমানিকের সন্ধানে । দুপুরে ওখানেই ঘর থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়া কালোচালের ভাত নুন - লংকা পেঁয়াজ দিয়ে খায় কিষান বাউরি । খেয়ে একটু ভাতঘুম পায় । বয়সটা তো হয়েছে , গতর কত আর টানবে ? একটা খেজুরগাছের নীচে সে শুয়ে চোখ বোজে । সে শোয় , পাশে শুয়ে পড়ে জীবনের বেশ কয়েকটা অতীত মুহূর্ত। ভিড় ঠেলে ঠেলে পিছনে ফিরে যায় কিষান সময়ের ভেলায় - সেই রাঙামাটি গ্রাম , কমলার সঙ্গে বিয়ে , ভরা সংসার । দিখু হল , রমরমা খাদান , দিখুর বিয়ে , নাতি ভিখু । খাদানে কাজ করতে নেমে হঠাৎ তোড়ে বয়ে আসা জলে ভেসে গেল দিখু । খাদান বন্ধ হল । তারপর অর্ধাহার , অনাহার , কমলা মরল , দিখুর বউ চলে গেল পরপুরুষের হাত ধরে । ভিখুকে বাঁচাতে হবে । তাই এই অমানবিক পরিশ্রম । 

         একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে বুকটা যেন খালি হয়ে গেল কিষানের । সব শূন্য , কবরের অন্ধকার । শূন্য থেকে উঁকি মারছে ভিখুর মুখ । বলছে , ' দাদাই ওঠ , কয়লা খুঁজবি না ? ' তন্দ্রা ভেঙে গেল কিষানের । চোখ মেলতেই আকাশ শূন্য , বাতাস শূন্য , সময় শূন্য । আর সেই শূন্য থেকে গলে গলে পড়ছে ভিখু । মাটি থেকে লাঠিটা তুলে নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগল কিষান খাদানের শূন্য হাঁ মুখের দিকে ।