সিদ্ধার্থ সিংহের দুটি অণুগল্প

সিদ্ধার্থ সিংহের দুটি অণুগল্প
ইলেকশন মেশিনারি
সিদ্ধার্থ সিংহ
শুধু পরিবারের লোকেরাই নন, গোটা পাড়া ভেঙে পরল এমএলএ-র বাড়ির সামনে--- এক্ষুনি রাজুকে গ্রেপ্তার করতে হবে। আজ সক্কালবেলায় পাড়ার চায়ের দোকানে বাকিতে চা খেতে গিয়েছিল। মাঝে মাঝেই বাকিতে খেত। কিন্তু দাম চাইলেই বলত, দিয়ে দেব। বেশি তাগাদা করলে মেজাজ দেখাত। তাই চাওয়ালা আজ চা দিতে চাননি।‌ বলেছিলেন, আগের টাকা মেটা, তার পরে চা খাবি‌।
এটা শুনে পাউরুটি কাটার বড় ছুরিটা ঝপ করে তুলেই সপাটে চালিয়ে দিয়েছে তাঁর পেটে। তখন চা বানাচ্ছিল সেই চাওয়ালার ছেলে। বাবাকে বাঁচাতে ছুটে এসেছিল সে। তাকেও কুপিয়ে দিয়েছে বেশ বেশ কয়েক বার। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দে ছুট।
থানা কোনও ডায়েরি নিচ্ছে না। আপনি পুলিশকে বলুন ওকে এক্ষুনি অ্যারেস্ট করতে।
এমএলএ সব শুনলেন। তার পর ওদের সামনেই থানায় ফোন করলেন। ওসিকে বললেন, যে ভাবে পারুন, যেখান থেকে পারুন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছেলেটাকে অ্যারেস্ট করুন। ওকে আমার চাই।
তার পর খুব নিচু গলায় ফিসফিস করে বললেন, সামান্য এক কাপ চায়ের দাম দেওয়া নিয়ে যে মানুষ খুন করতে পারে, এ রকম একটা রত্ন আমার এলাকায় আছে আপনারা আমাকে আগে বলেননি? সামনে ইলেকশন। ওকে আমার চাই।
-----------------------------------
বুদ্ধিজীবী
সিদ্ধার্থ সিংহ
লকডাউনের জেরে কত লোকের যে চাকরি গেছে কোনও ঠিক নেই। যাঁদের চাকরি আছে, তাঁদের মাইনেও অর্ধেক করে দেওয়া হয়ে গেছে। যাঁরা এই দুর্দশায় পড়েছেন, তাঁদের সংসার চলবে কী করে? এ নিয়ে গোটা দেশজুড়ে যখন আন্দোলন মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন এক নিউজ চ্যানেল প্রতিদিনকার মতো কয়েক জন বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে সান্ধ্য মসজিদ বসিয়েছে।
তা হলে গরিব লোকের সংসার চলবে কী করে? সঞ্চালিকা প্রশ্ন করতেই হাসি হাসি মুখ করে এক বুদ্ধিজীবী বললেন--- আরে বাবা, পৃথিবীর কোনও মানুষই সংসার চালানোর জন্য চাকরি করে না।
--- তা হলে কিসের জন্য করে?
সেই বুদ্ধিজীবী বললেন, প্রেমিকাদের গিফট কিনে দেওয়ার জন্য।
--- তা হলে তাদের সংসার চলে কী করে?
অন্য এক বুদ্ধিজীবী পাশ থেকে বললেন, কেন, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে।
--- আরে বাবা, তাদের ব্যাঙ্কে টাকাটা আসবে কোত্থেকে?
প্রথম বুদ্ধিজীবী বললেন, লোক যতই গরিব হোক, তার সেভিংস একাউন্টে দু'-চার কোটি টাকা নেই এটা আমি বিশ্বাসই করি না।
সঞ্চালিকা অবাক, মানে?
তৃতীয় বুদ্ধিজীবী বললেন, আরে বাবা, এই চাকরি চলে যাওয়াটাকে ছুটি হিসেবে ভোগ করুন না... বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে দল বেঁধে চলে যান ব্যাংকক কিংবা গোয়ায়। সেখানে গিয়ে ফুর্তি করুন। আনন্দে কাটান।
--- সেটা করতেও তো টাকা লাগে।
তিন বুদ্ধিজীবীই তখন একে অপরের মুখ করে হাসি হাসি মুখে বললেন, হাসাবেন না। জেনে রাখুন, ভাল কাজের জন্য কখনও টাকার অভাব হয় না। 
-----------------------------------