সব পাখি নীড় ফেরে না (গল্প)

সব পাখি নীড় ফেরে না (গল্প)

ওলিউর রহমান---

অফিস থেকে ঈদের জন্য ছুটি নিয়েছে আবির। আজ রওয়ানা হবে বাড়ির উদ্দেশ্যে। ঘড়িতে সকাল আটটা বাজে। আবির ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে স্টেশনের দিকে ছুটলো। তার ফাঁকে চেনা শহরটাকে আরো একঝলক দেখে নিলো। বাসে উঠে আবির তার মাকে কল করলো। ‘মা আমি বাসে উঠে পড়েছি। একটুপর বাস ছাড়বে। বেশী সময় লাগবে না, মাত্র সাড়ে পাঁচ ঘন্টার রাস্তা। ছোটকে বলো বশিরহাট থেকে আমাকে যেনো এগিয়ে নিতে আসে।’ এই বলে ফোনটা কেটে দিলো আবির!

কিছুক্ষণ পর বাস গন্তব্য উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলো। যাত্রাপথে মাঝে একবার বিরতিও নিলো। সবাই নেমে তাদের নিজ নিজ প্রয়োজন সেরে নিলো। বাস আবার যাত্রা শুরু করলো...

এদিকে আবিরের মা রূপবান বিবি সকাল থেকে অপেক্ষায় বসে আছেন, কখন তার ছেলে বাড়ি এসে পৌঁছোবে? আবিরের বাবাকে বারবার বোর করছেন এই বলে, ‘দেখোনা একটা ফোন করে আবির এখন কোথায় আসলো, ফিরতে আর কতক্ষণ লাগবে?’

আবিরের বাবা প্রতিবারই স্বস্তির সুরে একি উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন, ‘যাত্রাপথে বারবার ফোন করলে ছেলে বিরক্ত হবে। সময় হলে এমনিতেই পৌঁছে যাবে। তুমি টেনশন নিওনা!’

প্রশ্নের জবাবে তবু কেন জানি রূপবান বিবির মনে কিছুটা সংশয় রয়ে যায়, তিনি কখনো নিজের রুমের ভিতর কখনো বাড়ির বারান্দায় পায়চারি করতে থাকেন। আর বাহিরের গেটের দিকে কিছুক্ষণ পরপর ঘাড় ফিরে তাকাচ্ছেন। অপেক্ষা করে যাচ্ছেন, ছেলের ফিরে আসার! কতোদিন হয়ে গেলো ছেলের মুখখানা একটু দেখা হয়নাই। ছেলেটা বোধহয় কাজের চাপে অনেক শুকিয়ে গেছে! অপেক্ষায় থাকেন, কবে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে কপালে একটা চুমু খাবেন?

প্রতিটা সন্তানের প্রতি মায়েদের আলাদা একটা টান থাকে, মায়া থাকে। হয়তো সে কারণেই মায়েরা সন্তানের পথ চেয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অপেক্ষা করে যেতে একটু ধৈর্য হারা হননা!

বেলা দুপুর গড়িয়ে বিকেল চলে এলো। আবিরের ফেরার কোনো নাম নেই! সেই সকাল থেকে রূপবান বিবি না খেয়ে বসে আছেন। ছেলে আসলে একসাথে খাবেন বলে।

বিকেলের দিকে আবিরের বাবাকেও খানিকটা চিন্তিত মনে হচ্ছিল। এখনো কেন আবির বাড়ি ফিরছেনা। আবিরকে আনার জন্য খোকনকে বাজারে পাঠালাম, সেওতো আসছেনা।

হঠাৎ সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আবিরের বাবার কাছে আবিরের নাম্বার থেকে ফোন আসলো, ছেলের ফোন পেয়ে দেরি না করে ঝটপট ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অপরিচিত গলার আওয়াজ, ‘আপনি কী আবিরের বাবা?’

আবিরের বাবা কিছুটা ভীতিগ্রস্ত হয়ে, ‘আপনি কে বলছেন? আমার আবির কোথায়? আবিরের ফোন আপনার কাছে গেলো কী করে?’

ওপাশ থেকে জবাব আসলো, ‘আপনার ছেলে আবির আর নেই! দুপুর নাগাদ আবির যে গাড়ি চড়ে বাড়ি ফিরছিলো, তা এক্সিডেন্ট করে! মুখে একটু বেশী জখম হওয়ার প্রথমে আমরা তাকে চিহ্নিত করতে পারিনি। পরে প্যান্টের পকেটে একটা মোবাইল ফোন পেলাম। তা দেখে কনফার্ম হলাম। এবং আপনাকে কল করলাম।’

কথাটা শুনার পর আবিরের বাবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো! তিনি ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লেন! রূপবান বিবির আর বুঝতে বাকী রইলো না, ছেলের শোকে তিনিও পাগলপ্রায়! মুহূর্তের ভিতর পুরো পরিবারের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে গেলো! 

ঠিক এভাবেই আবিরের পরিবারের মতো আরো অসংখ্য পরিবারের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে যায়, আমাদের সামান্য কিছু ভুলের কারণে!

(সব পাখি নীড় ফেরে না) ওলীউর রহমান