যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যখাতে নার্সদের বিরুদ্ধে বর্ণ-বাদী ঘটনার সংখ্যা গত তিন বছরে ৫৫ শতাংশ বেড়েছে,

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যখাতে নার্সদের বিরুদ্ধে বর্ণ-বাদী ঘটনার সংখ্যা গত তিন বছরে ৫৫ শতাংশ বেড়েছে,

ইব্রাহিম খলীল

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যখাতে নার্সদের বিরুদ্ধে বর্ণ-বাদী ঘটনার সংখ্যা গত তিন বছরে ৫৫ শতাংশ বেড়েছে, জানিয়েছে দেশটির নার্সিং ইউনিয়ন রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং (RCN)। সংগঠনটির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালে তারা এক হাজারেরও বেশি কল পেতে পারে নার্সদের কাছ থেকে, যারা কর্মস্থলে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন—যেখানে ২০২২ সালে এমন ঘটনার সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০০।

RCN-এর হেল্পলাইনে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো ভয়াবহ। এক নার্স জানিয়েছেন, বার্ষিক ছুটির আবেদন প্রত্যাখ্যানের সময় তার ম্যানেজার তাকে বলেন, “তুমি ইউকে-তে আসারই দরকার ছিল না।” অপর এক সদস্য বলেন, সহকর্মী তাকে তিরস্কার করে বলেন, “তুমি আমাদের একজন নও।”

আরেক ঘটনায়, এক রোগী ও তার পরিবার এক নার্সের সেবা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এই বলে যে তারা “ওর মতো লোকদের” চিকিৎসা চান না, এমনকি তাকে “দাসী” বলে অপমান করে। একজন কৃষ্ণাঙ্গ নার্সকে বলা হয়, “অন্ধকারে কেবল কালো মানুষের দাঁত দেখা যায়”—যা প্রকাশ্য বর্ণবাদী মন্তব্য।

RCN-এর মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক নিকোলা রেঞ্জার (Prof Nicola Ranger) এই প্রবণতাকে যুক্তরাজ্যের জন্য “লজ্জাজনক” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি জাতিগত সংখ্যালঘু নার্সের অধিকার আছে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে কাজ করার। কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়োগদাতাদের আইনগত বাধ্যবাধকতা। যদি তারা ব্যর্থ হন, তবে নার্সরা সেই কর্মস্থল ত্যাগ করবেন—আর তখন সেবার মানও ঝুঁকিতে পড়বে।”

রেঞ্জার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অভিবাসীবিরোধী ভাষা ও নীতি বর্ণবাদী আচরণকে উস্কে দিচ্ছে, যা স্বাস্থ্যখাতের কর্মীদের ঝুঁকিতে ফেলছে। তিনি সতর্ক করেন, “আমাদের স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা ব্যবস্থা টিকে আছে নানা জাতি, ধর্ম ও জাতীয়তার নার্সদের অবদানে। তাই সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে এখনই ঘৃণামূলক বক্তব্য পরিহার করতে হবে।”

RCN আরও দাবি করেছে, স্বাস্থ্যখাতের নিয়োগদাতারা যেন বর্ণবাদবিরোধী নীতি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেয় এবং ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে মিলে কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া গড়ে তোলে।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা মন্ত্রণালয় (Department of Health and Social Care) এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই পরিসংখ্যান ভয়াবহ, এবং আমরা এই নিকৃষ্ট আচরণের শিকার নার্সদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাই। এনএইচএসে (NHS) বর্ণবাদ ও বৈষম্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই এনএইচএসে সব ধরনের বর্ণবাদ নিয়ে জরুরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা এনএইচএসের বৈচিত্র্যকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করি। বিভিন্ন পটভূমির পরিশ্রমী নার্সদের দক্ষতা ও নিষ্ঠার ওপরই যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা নির্ভর করছে, এবং তাদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।”