চবি থেকে মুনতাসীর মামুনের নিয়োগ বাতিল, সম্মানীর ৩৯ লাখ ফেরত দিতে অনুরোধ
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে নিয়োগ বাতিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। দায়িত্ব পালন না করার কারণ উল্লেখ করে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ১৫ মার্চ থেকে নিয়োগ বাতিল করে গত ১৯ অক্টোবর তাকে চিঠি পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
একইসঙ্গে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চের পর থেকে তিনি যে অর্থ নিয়েছেন, তা ফেরত দিতে ওই চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত মুনতাসীর মামুনের ব্যাংক হিসাবে সম্মানী পাঠানো হয়েছে। সে হিসাবে তাকে প্রায় ৩৯ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে।
১৯ অক্টোবর চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষরে মুনতাসীর মামুনকে এই বিষয়ে চিঠি পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এতে বলা হয়, গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ নির্বাহী কমিটির ৬ষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার ১ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেজিস্ট্রার অফিস চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি এক চিঠিতে আপনার বক্তব্য চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জানুয়ারি আপনার প্রদত্ত লিখিত জবাব ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ নির্বাহী কমিটির ৭ম সভায় তোলা হয়। এতে ১ নম্বর সিদ্ধান্তে আপনার জবাব গৃহীত হয়নি, যা চলতি বছরের ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৫৬২তম সভার ৪৭ নম্বর সিদ্ধান্তে অনুমোদিত হয়। এমতাবস্থায়, ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে চবি ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে আপনার নিয়োগ ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ থেকে বাতিল করা হলো। উক্ত সময় থেকে পরবর্তী সময়ে আপনাকে পরিশোধিত সমুদয় অর্থ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।
এর আগে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২৯তম সিন্ডিকেট সভায় মুনতাসীর মামুনকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
যোগদানের তারিখ থেকে দুই বছরের জন্য ওই পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তিনি ওই পদে যোগ দেন। ওই সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে প্রথম শ্রেণীর অধ্যাপকের সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে জানানো হয়েছিল।
সে হিসাবে প্রতি মাসে তার ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। এখন ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ থেকে নেওয়া সব টাকা তাকে ফেরত দিতে বলা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদটি সৃষ্টি করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা ও তার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে।
তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছিল, যে ব্যক্তি এই পদে নিযুক্ত হবেন, তার মূল কাজ হবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা।
এর আগে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’র দায়িত্ব নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে সম্মানজনক এই পদবি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের ‘‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’’ পদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাছাড়া নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী তিনি যে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তা ঠিকমতো পালন করেননি। গবেষণা প্রবন্ধ জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি দেননি। এ ছাড়া কর্মশালা আয়োজনের কথা থাকলেও তাও করেননি তিনি। অথচ অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে প্রতিমাসে সম্মানী নিয়ে গেছেন। সে কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’


